1. apbiman2015@gmail.com : Ashish Poddar Biman : Ashish Poddar Biman
  2. ganasonghoti@gmail.com : Daily Ganasonghoti : Daily Ganasonghoti
  3. jmitdomain@gmail.com : admin admin : admin admin
  4. sumonto108@gmail.com : Sumonto Sutradhar : Sumonto Sutradhar
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১০ অপরাহ্ন
সদ্যপ্রাপ্তঃ
ফরিদপুরে বাংলাদেশ কৃষকলীগের ৫২ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত ফরিদপুরে মধ্যরাতে পদ্মা নদীর বালু লুটকালে অভিযানে তেইশ ট্রাক ও আট বেকু জব্দ  ফরিদপুরে  ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালিত  ফরিদপুরে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে যুবদলের আর্থিক সহায়তা প্রদান  নগরকান্দায় সড়ক দুর্ঘটনায় মা-ছেলে নিহত, আহত  ফরিদপুরের কানাইপুরে বাস পিক-আপ সংঘর্ষে এক পরিবারের চারজনসহ নিহত বেড়ে ১৩ নানা আয়োজনে ফরিদপুরে নববর্ষ পালি ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে পদ্মা নদীতে ডুবে নিখোঁজ বাবার লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ফরিদপুরে উদযাপিত হচ্ছে ‌ পবিত্র ঈদ-উল-ফিত গভীর রাতে ঈদ সামগ্রী ও শাড়ী লুঙ্গী নিয়ে ছিন্নমূল অসহায় মানুষের দরজায় মন্ত্রী
শিরোনাম :
ফরিদপুরে বাংলাদেশ কৃষকলীগের ৫২ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত ফরিদপুরে মধ্যরাতে পদ্মা নদীর বালু লুটকালে অভিযানে তেইশ ট্রাক ও আট বেকু জব্দ  ফরিদপুরে  ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালিত  ফরিদপুরে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে যুবদলের আর্থিক সহায়তা প্রদান  নগরকান্দায় সড়ক দুর্ঘটনায় মা-ছেলে নিহত, আহত  ফরিদপুরের কানাইপুরে বাস পিক-আপ সংঘর্ষে এক পরিবারের চারজনসহ নিহত বেড়ে ১৩ নানা আয়োজনে ফরিদপুরে নববর্ষ পালি ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে পদ্মা নদীতে ডুবে নিখোঁজ বাবার লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ফরিদপুরে উদযাপিত হচ্ছে ‌ পবিত্র ঈদ-উল-ফিত গভীর রাতে ঈদ সামগ্রী ও শাড়ী লুঙ্গী নিয়ে ছিন্নমূল অসহায় মানুষের দরজায় মন্ত্রী

‘জাতীয় চিকিৎসক’ ও দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রীর স্মৃতিচারণ।

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই, ২০২০
  • ৫৮২ Time View

‘জাতীয় চিকিৎসক’ ও পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রীর স্মৃতিচারণ।

সুমন্ত সূত্রধর, কলকাতাঃ যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্যের এক বংশধর ছিলেন তিনি, 1882 সালের 1 লা জুলাই পাটনায় জন্মগ্রহণ করেন। বিশ্বখ্যাত এই ডাক্তার যিনি রোগীর মুখ দেখেই রোগ নির্ণয় করে ফেলতেন সেই বিধান চন্দ্র রায় প্রথমে ডাক্তারি পড়ার বিশেষ বাসনা ছিল না! শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং কলকাতা মেডিকেল কলেজে একসঙ্গে আবেদন করেন কিন্তু মেডিকেল কলেজে চান্স আগে পেয়ে যাওয়ায় তিনি ডাক্তারী তেই ভর্তি হন। যখন তিনি ডাক্তারি পড়তেন তখন তিনি তার অর্থাভাব ঘোচানোর জন্য অবসর সময়ে মেল নার্স হিসাবে কাজ করেছেন! প্র্যাকটিস শুরু করবার আগে তিনি কিছু সময়ের জন্য কলকাতার রাস্তায় ট্যাক্সী চালাতেন!

এই বিধানবাবু মেডিকেল কলেজে এমবি পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন! আবার তিনিই বিলেত গিয়ে দু’বছরে মেডিসিন ও সার্জারির চূড়ান্ত সম্মান এম আর সি পি এবং এফ আর সি এস প্রায় একই সঙ্গে অর্জন করেছিলেন!

1911 সালে যখন তিনি বিলেত থেকে ফেরেন তখন তার ফী ছিল মাত্র পাঁচ টাকা। এরপর তাঁর ডাক্তারি পেশায় বিপুল সাফল্য তাকে বিপুল সম্মান ও অর্থের অধিকারী করে তুলেছিল, রোগীদের কাছে তিনি হয়ে উঠেছিলেন সাক্ষাৎ ‘ধন্বন্তরি’। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ভিভিআইপিদের একমাত্র ভরসা ছিলেন তিনি। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থেকে কলকাতার সাধারণ নাগরিক সবার কাছে তিনি ছিলেন চিকিৎসক রূপী ভগবান।

বিধানবাবুর জীবনে অসীম প্রভাব ছিল আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এর। বাংলার বাঘের পরামর্শেই ডাক্তারী জগতের পাশাপাশি রাজনৈতিক জগতে পা রাখেন বিধানবাবু। 1922 সালে ব্যারাকপুর আসন থেকে নবাগত বিধানচন্দ্র রায় ভোটে হারিয়ে দেন রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় কে! এখান থেকেই শুরু হয় তার রাজনৈতিক জয়যাত্রা। এরপর 1930 এর পর কলকাতার মেয়র হন তিনি।

তিনি ছিলেন গান্ধীজীর অন্যতম কাছের। গান্ধীজি যখনই অনশন করতেন তখনই বিধানবাবু পৌঁছে যেতেন গান্ধীজীর কাছে। আরেকটি ব্যাপার তার রাজনৈতিক জীবনের বিশেষত্ব সেটি হলো তিনি সংঘাত এড়িয়ে লড়াই করবার পক্ষপাতী ছিলেন। তিনি গান্ধী-সুভাষ, গান্ধী-দেশবন্ধু, নেহেরু-শ্যামাপ্রসাদ সংঘাতে কোন পক্ষ নিতেন না। তিনি সবার সঙ্গে সদ্ভাব ও আন্তরিক হৃদ্যতা রক্ষা করে চলতেন।

নেহেরু সাথে তিনি কত কাছের ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় তাদের বিভিন্ন চিঠিপত্র। নেহেরু তার বন্ধুকে মাঝে মাঝে ডাব ও উত্তরপাড়ার তরমুজ রসগোল্লা পাঠানোর আবদার করতেন।

আবার তিনি ছিলেন শ্যামাপ্রসাদের অন্তরঙ্গ বন্ধু। 1942 এ এক অসুস্থতায় শ্যামাপ্রসাদ প্রায়ই মরো মরো। সবাই ধরে নিয়েছেন যে বাঁচবেন না উনি, বিধানবাবু তিনদিন তিনরাত জেগে বন্ধুর মতো সেবা করে তাকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছিলেন।তবে, বন্ধুত্বের নজির এখানেই শেষ নয়। জানা যায়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কিছুদিন আগে দিল্লিতে তৎকালীন কেন্দ্রীয় শিল্প ও সরবরাহ মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদের সঙ্গে দেখা করতে যান বিধানচন্দ্র রায়। তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ। কংগ্রেসের অন্দরে প্রবল অন্তর্কলহের জেরে নড়বড় করছে প্রফুল্ল ঘোষের চেয়ার। সে পদে তখন অন্যতম দাবিদার বিধানই। শ্যামাপ্রসাদ জানান, তিনি এখনও বিধানসভার সদস্য। বিধানের জন্য তাঁর কেন্দ্র ছেড়ে দিতে রাজি আছেন। বিধানও রাজি হয়ে যান। তবে শর্ত একটাই- স্বাস্থ্যের কথা ভেবে বঙ্গ রাজনীতিতে শ্যামাপ্রসাদ ফিরে এলে তিনি ওই পদ থেকে পদত্যাগ করবেন। এই ছিল বিধান-শ্যামাপ্রসাদের রসায়ন।

তিনি গান্ধীজীর বিশেষ প্রিয় হলেও তিনি ছিলেন দেশবন্ধুর ভাব শিষ্য। দেশবন্ধুর ছত্রছায়ায় তার রাজনৈতিক জীবন প্রস্ফুটিত হয়।

তবে রাজনৈতিক জগতে তার বিশেষ অবদান অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে। চৌঠা এপ্রিল শ্যামাপ্রসাদ এর উপস্থিতিতে তিনি অন্যান্য কংগ্রেস নেতা পাকিস্তানে যোগ না দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ গঠন করে ভারতে যোগ দেওয়ার পক্ষে প্রস্তাব গ্রহণ করে।স্বাধীনতার সময় নেহেরু তাকে উত্তর প্রদেশের গভর্নর হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু তখন তিনি বিদেশে থাকায় সেটা রাখতে পারেননি। পরে তার কর্মদক্ষতায় উল্লসিত হয়ে লর্ড মাউন্টব্যাটেন নেহেরু কে বলেন বিধানচন্দ্র রায় কে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্ব দাও।

সেই অনুসারে তিনি 23শে জানুয়ারি 1948 পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন। তার 14 বছরের মুখ্যমন্ত্রীত্বে তিনি পশ্চিমবঙ্গের উন্নতিকল্পে পূনর্গঠনের জন্য যে সমস্ত কাজ করেছেন(তার বিভিন্ন অপারগতাকে মনে রেখেও) তাকে পশ্চিমবঙ্গের শ্রেষ্ঠ মুখ্যমন্ত্রী বললেও অত্যুক্তি হয় না।

যখন লাখ টাকার প্র্যাকটিস ছেড়ে দিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন তখন হাওড়া-কলকাতার দেওয়ালে দেওয়ালে বামপন্থীদের দ্বারা কুৎসিত ভাষায় লেখা হল: ‘বাংলার কুলনারী হও সাবধান, বাংলার মসনদে নলিনী বিধান।’

তিনি মুখ্যমন্ত্রী হয়ে অনেক কিছু কাজ করতে না পারলেও বাঙালি রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়া, পশ্চিমবঙ্গের জন্য বিভিন্ন কাজ তাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। সেই কাজগুলির কিছু কিছু উল্লেখ করলাম:-

তিনি পশ্চিমবঙ্গের পাঁচটি শহরের রূপকার—দুর্গাপুর, কল্যাণী, বিধান নগর, অশোকনগর, হাবড়া।

তিনি সরকারি নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে অসম্পূর্ণ পথের পাঁচালী সিনেমা টির সরকারি প্রযোজনার ব্যবস্থা করেন।

তিনি তৎকালীন নেহেরুর সরকারের সঙ্গে লড়াই করে বিহার ঝাড়খণ্ডের জায়গায় পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরে লৌহ ইস্পাত শিল্প-কারখানা আদায় করে আনেন। এবং সেখানে শিল্পাঞ্চল গড়েন।

কলকাতা বন্দরের সমস্যা মেটানোর জন্য হলদিয়া বন্দরের নির্মাণ ও ফারাক্কা ব্যারেজ নির্মাণে সচেষ্ট হন।বজ বজে তিনি তৈল শোধনাগার নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু সেটি সফল হয়নি।

কলকাতা থেকে রেলের বিভিন্ন দপ্তর উঠিয়ে উত্তর প্রদেশ বিহারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে নেহেরু। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী সেসবের খবর পেয়ে তড়িঘড়ি জানান বিধানবাবু কে। বিধান ও শ্যামাপ্রসাদ এই দুই বাঙালির লড়াই এ রেলের বড় দুটি শাখা কলকাতার অধীনে আসে।

নেহেরু স্পষ্টতই বাঙালি বিরোধী ছিল। স্বাধীনতার পরে বিভিন্নভাবে বাঙালিকে বঞ্চনা করা শুরু করে নেহেরু,অর্থ কমিশন থেকে মাশুল সমীকরণ নীতি সবকিছুতেই পশ্চিমবঙ্গ কে কম গুরুত্ব দিতে থাকে নেহেরু। বিধানচন্দ্র রায় সুভাষচন্দ্র বা শ্যামাপ্রসাদ এর মত বাইরে নেহেরুর বিরুদ্ধে গর্জে না উঠলেও আমি মনে করি এই সব সিদ্ধান্তের কারণে তিনি নেহেরু উপর ক্ষুব্ধ ছিলেন, হয়তো তিনি মুখ্যমন্ত্রী না থাকলে যে সবকিছু পশ্চিমবঙ্গ তখন পেয়েছে সে সব ও নেহেরু দিতেন না। একবার একটি কারণে বিধানচন্দ্র এতই চটে যান যে তিনি সঙ্গে সঙ্গে তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী টি টি কৃষ্ণমাচারি-কে ফোন করে বলেন, “তোমরা দিল্লির নেতারা কলকাতার মধু নিতে খুব পটু আর পশ্চিমবঙ্গকে দেওয়ার ব্যাপারে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠি?” তৎকালীন নেহেরু এবং তার কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গকে কতটা অপছন্দ করত তার প্রমাণ।

মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর দেশভাগের যন্ত্রণা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, কমিউনিস্ট পার্টির বিদ্রোহ ভাবিয়ে তুলেছিল বিধান রায়কে। তার মধ্যেও বাংলায় শিল্পবিস্তার নিয়ে তাঁর মনোবলে এতটুকুও চিড় খায়নি। আর তাঁকে সে সময় প্রভূত সাহায্য করেছিলেন বন্ধু তথা কেন্দ্রীয় শিল্পমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। চিত্তরঞ্জনে রেলইঞ্জিন কারখানা থেকে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন, দেশের প্রথম কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় খড়গপুর আইআইটি-সহ একাধিক ক্ষেত্রে শ্যামাপ্রসাদের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।তিনি দেশভাগ ও তার জন্য শরণার্থী হিন্দুদের আশ্রয় দিতে প্রানপন চেষ্টা করেছিলেন।আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বাঙালি বাসভূমি গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেটা সফল হয়নি।

দেশভাগের পর পাকিস্তানে যখন সংখ্যালঘুরা হিন্দু বদেখতেন অত্যাচারিত হচ্ছেন, দিনের আলোয় খুন হচ্ছেন, বাধ্য হয়েই বিধানবাবু নেহেরুকে চিঠি দিয়ে বলেন, পাকিস্তান পূর্ববঙ্গে হিন্দুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলে, পুনর্বাসনের জন্য পূর্ববঙ্গের কিছু অঞ্চল দখল করুক ভারত। এই প্রস্তাবে সহমত পোষণ করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ, বল্লভভাই প্যাটেল। তবে পণ্ডিত নেহেরু এই প্রস্তাবে সায় দেননি। তিনি হেঁটেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলীর সঙ্গে আলোচনার পথে। যা বিখ্যাত হয়ে আছে নেহরু-লিয়াকত চুক্তি নামে। এই চুক্তির প্রতিবাদে শ্যামাপ্রসাদ পদত্যাগ করেন। কিন্তু বিধানবাবু এই চুক্তির বিরোধিতা করলেও তিনি প্রকাশ্যে নেহেরু বিরোধিতা করেননি।

তার বন্ধু শ্যামাপ্রসাদ এবং গুরু চিত্তরঞ্জন দাশ দুজনেই রহস্যজনকভাবে মারা যান। দুজনের মৃত্যুর পর তাদের বাড়ির লোক তাকে বলেছিলেন তুমি থাকতে এদের সঠিক চিকিৎসা হলো না কেন? বিধানবাবু নিশ্চুপ ছিলেন। কারণ তিনি আঁচ করেছিলেন কি হয়েছে ভেতরে, কিন্তু তার কিছুই করার ছিলো না। তিনি হয়তো ঘরের অন্তরালে কেঁদেছেন কিন্তু বাইরে চোখের জলকে মুছে দায়িত্বশীল অভিভাবকের মতই পশ্চিমবঙ্গের উন্নতির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছেন।

তিনি ছিলেন অতিরিক্ত কাজ পাগল মানুষ। তিনি 65 বছর বয়সে মুখ্যমন্ত্রী হন। তিনি তাঁর সকাল শুরু করতেন গীতা পাঠ ও ব্রহ্মস্তোত্র পাঠ করে। তারপর স্নান প্রাতঃরাশ করে বিনামূল্যে রোগী দেখতেন। তারপর প্রায় ন’টা থেকে সবার আগে রাইটার্স বিল্ডিং-এ আসতেন এবং কাজ করতেন প্রায় রাত ৮-৯ টা পর্যন্ত। তাঁর জীবনীকার কে পি টমাস তাঁকে একবার বলেছিলেন তার অত্যধিক কাজ করা উচিত নয়, তাতে শরীর খারাপ হবে। এবং যদি আপনি বিয়ে করতেন তাহলে তারাও আপনাকে এত কাজ করতে বারণ করতেন। তখন কাজপাগল বিধানবাবু বলেছিলেন আমার তো কাজের সঙ্গে বিবাহ হয়েছে!

তার জীবদ্দশায় তিনবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল(প্রথমবার 1930 সালে)। প্রথম দুবার এরপর ও তিনি অমানুষিক পরিশ্রম করে গেছেন। 24 শে জুন তিনি শেষ বার রাইটার্স বিল্ডিং-এ আসেন। 30 শে জুন তিনি তাঁর প্রিয় বন্ধু ললিতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়কে বললেন, ‘‘আমি তিরিশ বছর হৃদরোগের চিকিৎসা করে আসছি, আমার কতটা কী হয়েছে আমি তা ভাল করেই বুঝতে পারছি। কোনও ওষুধই আমাকে ভাল করতে পারবে না।”

শেষ পর্যন্ত পরের দিন অর্থাৎ তার জন্মদিনে তিনি দুপুরের দিকে মারা যান।

দারুন প্রতিভাশালী এবং অতীব পরিশ্রম করতে পারা এই মানুষটির ছিল ভগবানের প্রতি অগাধ বিশ্বাস, তিনি কখনো সমস্যায় পড়লে, নিন্দার মুখোমুখি হলে বলতেন “তোমার সাধ্যমতো চেষ্টা করো, এবং বাকিটা ভগবানের উপর ছেড়ে দাও।” আবার কখনও কখনও মেডিক্যাল কলেজের প্রিয় মাস্টারমশাই কর্নেল লুকিসকে স্মরণ করে বলতেন, “হাত গুটিয়ে বসে থাকার চেয়ে চেষ্টা করে হেরে যাওয়া ভাল।”

তার অসামান্য পেশাগত দক্ষতা কে সম্মান দিতে তার জন্মদিন ও মৃত্যুদিন কে ভারতের জাতীয় চিকিৎসক দিবস কবে পালন করা হয়, এবং তার পশ্চিমবঙ্গের প্রতি অসংখ্য কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে ‘বাংলার রূপকার’ বলে অভিহিত করা হয়। তাঁর জন্ম ও মৃত্যুদিনে তাঁকে প্রণাম ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি।

সূত্রঃ ইন্টারনেট।

Please Share This Post...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
The Daily Ganasonghoti © 2020
support By : Ganasonghati